DA রায়ের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিতর্ক/DA fundamental right

 DA রায়ের কার্যকারিতা/পদক্ষেপ না অন‍্য কিছু- বর্তমান বিতর্ক।

DA রায়ের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিতর্ক/DA fundamental right



DA নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট তাদের রায় দিয়ে দিয়েছে। সরকারি কর্মচারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মহার্ঘভাতা মৌলিক অধিকার স্বীকৃত প্রাপ্ত। এই অধিকার এক-দু'দিনের আসেনি কর্মচারীদের বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অধিকারপ্রাপ্ত হয়েছিল। আদালত তার স্বীকৃতি দিয়েছে। অধিকার স্বীকৃতি পাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আশা করা যায় সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
    রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। গণতান্ত্রিক দেশে যে কোন কিছু নিয়ে সমালোচনা করা যায় তবে আদালতের রায়ে অবশ্য অবশ্যই মহামান্য আদালত কে মান্যতা দিয়েই আদালতের রায়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেই পারেন। গত কয়েকদিন থেকেই আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে যে লেখা বাঘের পিঠে সওয়ার এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে বেশ কয়েকদিন থেকেই বিতর্ক চলছে। এই পোস্টেই তা নিয়ে দু চার কথা। এটি ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত কমল কুমার দাশের ওয়াল থেকে। প্রাপ্তি স্বীকার করছি।
  1. ডি এ মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের একজন বিচারপতি জানিয়েছেন DA সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু সেই পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম সরকারি কর্মীদের ডিএ পাওয়ার এই অধিকার কে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করতে নারাজ। তাদের যুক্তি হলো মৌলিক অধিকার বস্তুতির দেশের সব নাগরিকের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হতেই হবে। আদালত পণ্য মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আয় বৃদ্ধির অধিকারের যে যুক্তি পেশ করেছে তাও সব নাগরিকের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হতেই হয়। মহামান্য বিচারপতি আইনের পরিসরে দাঁড়িয়ে বিচারাধীন বিষয়ে রায় দেন। এক্ষেত্রে বিচারক মহাশয় কেন ডিয়ে পাওয়ার অধিকার কে সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত করেছেন তার ব্যাখ্যা আইনের ছাত্ররা ভালো দিতে পারবেন। সাধারণ নাগরিক হিসেবে যেটুকু বুঝেছি তা ব্যক্ত করছি। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের 12 থেকে 35 নম্বর ধারায় উল্লিখিত 6টি অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে দেশের মানুষ এই এই অধিকার সমান ভাবে ভোগ করে। কিন্তু দিয়ে পাওয়ার অধিকার সরকারি কর্মীদের অর্জিত অধিকার। এর সাথে সব নাগরিকের সংবিধান মৌলিক অধিকারের কোন যোগসূত্র নেই। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মীরা এই অধিকার অর্জন করেছে। তাই আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন দিয়ে সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকার।

2. পণ্য মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আয় বৃদ্ধির অধিকারের যে যুক্তি আদালতে পেশ করেছে তার সরকারি কর্মচারীদের সার্ভিস রুল এর অন্তর্ভুক্ত। পণ্য মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির অধিকার সরকারি কর্মীদের দেওয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা এবং সম্মানজনক জীবনধারণের কথা মাথায় রেখে। মনে রাখতে হবে এই অধিকার ও সরকার স্বেচ্ছায় দেয়নি। লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে।

3. ডিএ পাওয়ার অধিকার কে আদালত আইনি অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছে। আইনগত অধিকার বলতে আদালত যা বোঝাতে চেয়েছে তা আইনের ব্যাখ্যার মধ্যে খোঁজা যাক।
A legally enforceable contract means that you can hold the other contracting party to their promises. If the other contracting party feels are refuses to upload their obligations , you can rely on the law to enforce your agreement. 
মোদ্দাকথা আইনি অধিকার হলো একটি শক্তিশালী স্ত্রীর অধিকার। অথচ রায় ঘোষিত আইনি অধিকার এ প্রসঙ্গটি সুচারুভাবে তার লেখায় উল্লেখ রাখেননি।

4.  মহার্ঘভাতার সঙ্গে সরকারের কল্যাণ প্রকল্পগুলোর তুল্য মূল্য বিচার করে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে "কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মী নাকি বিপুলসংখ্যক ( নিশ্চিত ভাবেই দরিদ্রতর) রাজ‍্যবাসী, কার স্বার্থরক্ষা কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়?"
কিছুসংখ্যক এবং বিপুল সংখ্যক এই শব্দটা ব্যবহার করে সচেতনভাবে রাজ্যের দরিদ্র মানুষ এবং সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আড়াআড়িভাবে একটি বিভাজন রেখা তৈরি করে দিয়ে প্রদানকে তথাকথিত উন্নয়নের বিপ্রতীপে দাঁড় করিয়েছেন। অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ কে মান্যতা দিয়ে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামকে সম্মান জানিয়ে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য অধিকার যদি সরকার মিটিয়ে দেয় তাহলে রাজ্যের গরিব মানুষের ভয়ঙ্কর দুর্বিপাকের মধ্যে পড়বে। রাজ্যের মূল কল্যাণ প্রকল্প গুলো আর চালু রাখা সম্ভব হবে না। সম্পাদকীয় কলাম এ ধরেই নিচ্ছেন জনকল্যাণ প্রকল্পের জন্য সরকার বছরে যে 40 হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ করে তার থেকেই 31 শতাংশ হারে বকেয়া ডিএ বাবদ 23 হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে সরকারি কর্মীদের দেবেন। সরকারের পরিকল্পনা নাজেনে পত্রিকার এই আগাম অনুমান প্রমাণ করে যে তারা বেতনভুক সরকারি কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের বিরোধ বাড়িয়ে দিয়ে গোপনে সরকারের পক্ষ অবলম্বন করার চেষ্টা করছেন। অথচ সরকার মেলা খেলা উৎসবের নামে বছরের-পর-বছর কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে সে বিষয়ে একটি বাক্য আনন্দবাজার ব্যয় করতে চায় ন
। এই সরকার ক্লাব পুজো কমিটিকে বিপুল পরিমাণ দান-খয়রাত ই করে তাতে কি জনহিতকর প্রকল্প বাধাপ্রাপ্ত হয় না? সরকারি কর্মীদের আইন এবং সাংবিধানিক অধিকারকে মেনে মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দিলেই সব কল্যাণ প্রকল্প মুখ থুবরে পড়বে? তাছাড়া নিরপেক্ষভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সরকারের বেশির ভাগ প্রকল্প ভোট কেন্দ্রিক।

5. সম্পাদকীয় সেই কলামের শেষদিকে পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে বলেছেন " মহার্ঘ ভাতা ইত্যাদি তর্ক অতিক্রম করে সরকারি কর্মীদের বেতন কে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করার পথ খোঁজা জরুরি"। এখানে প্রশ্ন হল সরকারি কর্মীরা উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত নয় একথা কোথায় প্রমাণিত হলো? রাজ্যের সিংহভাগ পড়ুয়া এখনো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। মিডিয়া যতই অপপ্রচার চালাক না কেন এখনো সরকারি বিদ্যালয় কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করা ছাত্র ছাত্রীরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরিব্যপ্ত অসংখ্য সরকারি প্রকল্প পরিচালনা নিশ্চয় সরকারী কর্মচারী সম্পন্ন করছেন? এই সমস্ত সাফল্যয়কি উৎপাদনশীলতার আওতায় আসে না? সরকার কোন কর্পোরেট সংস্থা নয় ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং আনন্দবাজার পত্রিকার গোষ্ঠীর মত মনোভাব নিশ্চয় সরকারের হবে না। সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সরকারি চাকরির সমস্ত সুযোগ সুবিধাগুলি নির্ধারিত হয়েছিল অনেক আগেই। তাই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সরকারি সংস্থা কে গুলিয়ে দিয়ে সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার ঘৃণ্য চক্রান্ত বন্ধ করার জন্য আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো। মনে রাখবেন সরকার কর্মীদের হাতে অর্থ দিলেই তার স্বাভাবিক নিয়মে বাড়ি ফিরে যাবে। এতে দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে বাজার গতিশীল হবে এবং চাঙ্গাও হবে। ফলে সরকারি কর্মীদের সামাজিক গ্রহণযোগ্য সুন্নতে নামিয়ে এনে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত করলে আখেরে সমাজেরই ক্ষতি হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post